শ্রীশ্রী ১০৮ স্বামী ধনঞ্জয় দাস কাঠিয়া বাবা পত্রামৃত

ওঁ হরিঃ
৪/৯/৪২
পরমকল্যাণবরেষু–

তুমি ও বাটীস্থ সকলে আমার আশীর্ব্বাদ জানিবে । ভ্রূযুগলের মধ্যে যেরূপ ধ্যান ও জপ করিতে বলিয়াছি তদ্রূপই করিবে, অধিকন্তু তৎসহ ব্যাপক ব্রহ্মের ধ্যান করিতে পারিলে তাহাও করিবে। সহস্রারে ধ্যান করিলে মাথা গরম হইতে থাকিবে ও যন্ত্রণা হইতে পারে এবং কঠিন রোগের সম্ভাবনা থাকে; অতএব তুমি সহস্রারে ধ্যান করিতে যাইও না ।
ভ্রূদ্বয়ের মধ্যে শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের ধ্যানের সহিত ব্যাপক ব্রহ্মের ধ্যান করিতে থাকিলে তাহার দ্বারাই কুণ্ডলিনী শক্তি ধীরে ধীরে ঊর্দ্ধগামী হয়। শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণকেই পরমাত্মা পরব্রহ্ম বলিয়া জানিবে । তিনি সর্ব্বব্যাপী অদ্বৈত অখণ্ড চিদানন্দ স্বরূপ হইয়াও ভক্তদের ধ্যানের সুবিধার জন্য সুচিন্ত্য বিগ্রহ ধারণ করিয়াছেন । এইরূপ ধারণা করিয়া জাগতিক সমস্ত বস্তু– মাতা, পিতা, স্ত্রী, পুত্র, কন্যাদি, আত্মীয়স্বজন এবং অন্য সমস্ত ঘরবাড়ী, ইটপাথর, বৃক্ষ, লতাপাতা, পশুপক্ষী, কীটপতঙ্গ, মনুষ্য, দেবতাদি সমস্তই তাঁহার রূপ, – তিনি ভিন্ন জগতে কিছুই নাই, এইরূপ জ্ঞান করিতে অভ্যাস করাকেই সর্ব্বব্যাপী ব্রহ্মের ধ্যান বলা হয়। বিচার করিয়াও দেখ – তোমার মাতাপিতা, স্ত্রী, সন্তানাদির মধ্যে এক বস্তু বর্ত্তমান থাকায় সকলের সহিত তোমার সম্বন্ধ আছে । তিনি একসঙ্গে তাঁহাদের সকলের মধ্য হইতে বাহির হইয়া গেলে সব শরীরগুলি পচিয়া মাটিতে মিশিয়া যাইবে অথবা পুড়াইয়া ফেলিবে, তখন আর কাহারও‌ সহিত কিছু সম্বন্ধ থাকিবে না । এইরূপ বিশ্বসংসারের সমস্ত বস্তু হইতে একসঙ্গে তিনি বাহির হইয়া গেলে মহাপ্রলয় হইয়া যাইবে । অতএব সেই এক বস্তুর স্থিতিতেই এই জগতের স্থিতি জানিয়া প্রকাশিত সমস্ত জগৎ তাঁহারই রূপ এইরূপ জ্ঞান করিতে অভ্যাস করিবে এবং সমস্তই তিনি হওয়ায় সকলকে মনে মনে প্রণাম করিতে ও হিংসা, বিদ্বেষ, ক্রোধাদি পরিত্যাগ করিয়া শান্তচিত্তে অবস্থান করিতে অভ্যাস করিবে। ইহাতেই চিত্ত নির্ম্মল হইতে থাকিবে। আমার শ্রীগুরুদেব ব্যাপক ব্রহ্মের ধ্যান বিষয়ে এক পত্র লিখিয়াছিলেন তাহা ১ম খণ্ড পত্রাবলীর শেষ পৃষ্ঠায় উদ্ধৃত আছে। যথা :- “অনন্ত জীব সমন্বিত এই ব্রহ্মাণ্ড সমস্তই ব্রহ্ম ; তিনি অনন্ত শক্তিমান , সেই অনন্ত শক্তির দ্বারা তিনি অনন্ত জীবময় বিশ্বরূপ ধারণ করিয়াছেন । তুমি, আমি অথবা অপর কেহ তাঁহা হইতে ভিন্ন নহে; তিনিই এই নানারূপে ক্রীড়া করিতেছেন। ইহাই সার সত্য জানিবে। শ্রুতি স্বয়ং এবং ব্রহ্মবাদী ঋষিগণ সকলে এক বাক্যে ইহা প্রকাশ করিয়াছেন, এই বিষয়ে তুমি কিছু সন্দেহ করিও না, ইহা অনুভব করিতে সদা যত্ন করিবে। এই যত্নে সকল ঋষিকুল তোমার সহায়কারী হইবেন।”
যুগলমূর্ত্তির ধ্যানের সঙ্গে এই সর্ব্বব্যাপী ব্রহ্মের চিন্তা করিয়া নিজেকেও তাঁহার অঙ্গীভূত জ্ঞান করিতে হয়, শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণের মূর্ত্তিও সেই সর্ব্বব্যাপী ব্রহ্মের অঙ্গীভূতরূপে প্রকাশিত। এই রূপ ধ্যান যত অভ্যাস হইতে থাকিবে ততই আনন্দ পাইতে থাকিবে।
পত্রে আর অধিক লেখা যায় না, সাক্ষাৎ হইলে তখন ভাল করিয়া বুঝিয়া লইবে। এখন লিখিতমত যথাসাধ্য অভ্যাস করিবে, ইহা করিতে পারিলে তবে ব্রহ্মধ্যানের প্রারম্ভ হইবে।
…অত্র মঙ্গল ।
ইতি–
‌আশির্ব্বাদক
শ্রীধনঞ্জয়দাস

অনুলিখন – শ্রী বিশ্বনাথ রায়